বাংলাদেশ শেয়ারবাজার টিপস ☆ Stock Market for Beginners
শেয়ারবাজার কী? অনেকেই এই প্রশ্নটি প্রায়ই করেন। আপনি হয়তো বিভিন্ন সময়ে লোকদের শেয়ারবাজার নিয়ে কথা বলতে শুনেছেন অথবা ইন্টারনেটে শেয়ারবাজার, বিশেষ করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (Dhaka Stock Exchange) সম্পর্কিত অনেক পোস্ট দেখেছেন। কিন্তু কি জানেন, বেশিরভাগ পোস্ট আপনাকে শেয়ারবাজারের (পুঁজিবাজার) সম্পূর্ণ তথ্য দেয় না। এগুলোতে প্রায়ই অসম্পূর্ণ এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য থাকে, যা আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দেয়।
আমাদের এই পোস্টটি শেয়ারবাজার এবং বিশেষ করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE) সম্পর্কে আপনাকে বিস্তারিত এবং সঠিক তথ্য সরবরাহ করবে, যাতে আপনি বিনিয়োগের ব্যাপারে সুসংগত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আসুন, দেরি না করে শেয়ারবাজার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে শুরু করি।
শেয়ারবাজার কী?
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (Dhaka Stock Exchange) বাংলাদেশে একটি প্রতিষ্ঠিত সরকারি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান যা কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এর অধীনে নিবন্ধিত। এটি এমন একটি বাজার যেখানে শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড, ডিবেঞ্চার, এবং সরকারি ও প্রাইভেট বন্ডের লেনদেন হয়। সহজভাবে বললে, স্টক এক্সচেঞ্জ একটি বাজারের মতো, যেখানে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক পণ্য কেনাবেচা করা হয়।
যেমন বাজারে বিভিন্ন পণ্য—সবজি, মাংস, এবং মসলা—বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করা হয়, তেমনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (DSE) শেয়ারগুলো বিভিন্ন সেক্টরে বিভক্ত। উদাহরণস্বরূপ, ব্যাংকিং, ইঞ্জিনিয়ারিং, ফিনান্সিয়াল, পাওয়ার এবং শক্তি সেক্টরে শেয়ার লেনদেন হয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের পছন্দের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করতে এই সেক্টরগুলোতে প্রবেশ করেন।
এখন, আমার দৃষ্টিকোণ থেকে শেয়ার বাজার (Share Market) হল বাঘ ও সিংহের মধ্যে লড়াই, যেখানে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা প্রায়শই “বিড়াল” হয়ে যান। যদিও এটি মজার শোনায়, তবে এর মধ্যে গভীর সত্যতা রয়েছে। শেয়ার বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির মালিকদের মধ্যে তীব্র আর্থিক প্রতিযোগিতা চলে, এবং সাধারণ বিনিয়োগকারী অনেক সময় “বলির পাঠা” হয়ে যান। আশা করি, আপনি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।
ক্যাপিটাল মার্কেট (Capital Market) সাধারণত দুই ভাগে বিভক্ত: প্রাইমারি মার্কেট, যেখানে নতুন শেয়ার বিক্রি হয়, এবং সেকেন্ডারি মার্কেট, যেখানে আগে থেকে বিক্রি হওয়া শেয়ারগুলোর লেনদেন হয়।
প্রাইমারি মার্কেট
প্রাইমারি মার্কেট: শেয়ার বাজারের প্রথম ধাপ
প্রাইমারি মার্কেট (Primary Market) হল সেই বাজার যেখানে নতুন শেয়ার এবং সিকিউরিটিজ প্রথমবারের জন্য বিক্রি করা হয়। এই বাজারে কোম্পানিগুলি তাদের নতুন শেয়ার প্রকাশ করে এবং সেগুলো বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করে। অর্থাৎ, প্রাইমারি মার্কেট কোম্পানির জন্য একটি আর্থিক উৎস যেখানে তারা পুঁজি সংগ্রহ করে তাদের ব্যবসার উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণের জন্য।
প্রাইমারি মার্কেটের গুরুত্ব
প্রাইমারি মার্কেটের অনেক গুরুত্ব রয়েছে:
- পুঁজি সংগ্রহ: কোম্পানিগুলি তাদের ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি সংগ্রহ করার জন্য প্রাইমারি মার্কেট ব্যবহার করে। নতুন শেয়ার ইস্যু করে তারা বিনিয়োগকারীদের থেকে অর্থ পায়।
- শেয়ারের দাম নির্ধারণ: প্রাইমারি মার্কেটে শেয়ারের দাম সাধারণত কোম্পানির মূলধন এবং তার ব্যবসার সম্ভাবনার উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয়।
- বিনিয়োগকারীদের সুযোগ: নতুন শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির অংশীদারিত্ব অর্জন করতে পারেন এবং কোম্পানির বৃদ্ধিতে অংশগ্রহণের সুযোগ পান।
প্রাইমারি মার্কেটের প্রক্রিয়া
প্রাইমারি মার্কেটে শেয়ার বিক্রির প্রক্রিয়াটি সাধারণত নিম্নরূপ:
- শেয়ার ইস্যু করার সিদ্ধান্ত: কোম্পানির বোর্ড অফ ডিরেক্টর নতুন শেয়ার ইস্যু করার সিদ্ধান্ত নেয়।
- শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ: কোম্পানি এবং তাদের আর্থিক পরামর্শকরা শেয়ারের দাম নির্ধারণ করে।
- অ্যালোটমেন্ট: শেয়ারগুলোর আবেদন গ্রহণের পর, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বরাদ্দ করা হয়।
- শেয়ার বাজারে প্রবেশ: ইস্যুকৃত শেয়ার সাধারণত সেকেন্ডারি মার্কেটে প্রবেশ করে যেখানে বিনিয়োগকারীরা তাদের কিনতে বা বিক্রি করতে পারেন।
উদাহরণ
বাংলাদেশে প্রাইমারি মার্কেটের একটি উদাহরণ হল “Initial Public Offering (IPO)”। IPO এর মাধ্যমে একটি কোম্পানি প্রথমবারের জন্য তাদের শেয়ার সাধারণ জনগণের কাছে বিক্রি করে। বিনিয়োগকারীরা এই শেয়ার কিনে কোম্পানির অংশীদার হন এবং ভবিষ্যতে কোম্পানির বৃদ্ধির সাথে সাথে লাভ অর্জনের সুযোগ পান।
প্রাইমারি মার্কেট একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন পুঁজি সংগ্রহের সুযোগ তৈরি করে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন বিনিয়োগের সুযোগ সরবরাহ করে। এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।
সেকেন্ডারি মার্কেট
সেকেন্ডারি মার্কেট হল এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে শেয়ার, বন্ড এবং অন্যান্য সিকিউরিটিজের লেনদেন হয়। এটি মূলত প্রাথমিক মার্কেটের পরবর্তী স্তর, যেখানে বিনিয়োগকারীরা একটি কোম্পানির ইস্যুকৃত শেয়ারগুলি কিনতে এবং বিক্রি করতে পারে।
প্রাথমিক মার্কেটে একটি কোম্পানি তার শেয়ার প্রথমবারের মতো বিক্রি করে, সাধারণত আইপিও (Initial Public Offering) এর মাধ্যমে। যখন বিনিয়োগকারীরা সেই শেয়ারগুলি কিনে নেন, তখন সেগুলি সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেন হতে শুরু করে।
সেকেন্ডারি মার্কেটের গুরুত্ব
সেকেন্ডারি মার্কেটের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা তাদের শেয়ারগুলি সহজেই বিক্রি করতে পারেন। এটি বাজারের তরলতা নিশ্চিত করে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে। শেয়ারের দাম বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে স্থির হয়। তাই, সেকেন্ডারি মার্কেটের দাম পরিবর্তনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা সহজে তাদের লাভ-ক্ষতির হিসাব করতে পারেন।
সেকেন্ডারি মার্কেটের প্রকারভেদ
সেকেন্ডারি মার্কেট সাধারণত দুইটি ভাগে বিভক্ত:
- এক্সচেঞ্জ মার্কেট: এটি সেই বাজার যেখানে শেয়ারগুলি ফরমালভাবে তালিকাভুক্ত হয় এবং লেনদেন হয়, যেমন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (CSE)।
- ওভার দ্য কাউন্টার (OTC) মার্কেট: এটি একটি অবৈধ বাজার যেখানে শেয়ারগুলি সরাসরি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কেনাবেচা হয়, সাধারণত কোনো ফরমাল এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে নয়।
সেকেন্ডারি মার্কেটের সুবিধা
- বাজারে তরলতা: বিনিয়োগকারীরা তাদের শেয়ারগুলি সহজেই কিনতে এবং বিক্রি করতে পারেন।
- দাম নির্ধারণ: সেকেন্ডারি মার্কেটে শেয়ারের দাম সরাসরি বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের উপর নির্ভর করে।
- বিনিয়োগের সহজ মাধ্যম: নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য সেকেন্ডারি মার্কেট শেয়ারে বিনিয়োগ করার একটি সহজ এবং কার্যকর মাধ্যম।
সারসংক্ষেপে, সেকেন্ডারি মার্কেট বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম, যা তাদের শেয়ারের লেনদেনের মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা এবং নিরাপত্তা প্রদান করে। এটি পুঁজিবাজারের সুষ্ঠু ও কার্যকর কার্যক্রমের জন্য অত্যাবশ্যক।
শেয়ার বাজারের ধারণা বোঝার জন্য আমরা আমাদের আলোচনা তিনটি পর্বে ভাগ করেছি। আজকের পোস্টটি হচ্ছে প্রথম পর্ব-০১। এই পর্বে আমরা শেয়ার বাজারের সাধারণ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করছি। আমরা আশা করছি পরবর্তী পর্বগুলোতে বিষয়টি আরো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে। তাই, "বিনিয়োগকারী.কম" এর সঙ্গে থাকুন আমাদের এই জ্ঞানের যাত্রায়।