শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার উপায় 😻 Stock Market Investment
একটি সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে আর্থিক বিনিয়োগ (Financial Investment) করা আনন্দের বিষয়। পরিকল্পনা করার আগে, আপনার স্পষ্ট লক্ষ্য থাকা উচিত। আপনি কত টাকার মালিক হতে চান, সেটি আগে নির্ধারণ করুন।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি অবসর গ্রহণের পর একটি বিলাসবহুল বাড়ি কিনতে চান বা বিদেশে ভ্রমণ করতে চান, তাহলে আজ থেকেই বিজনেস বিনিয়োগ (Business Investment) সম্পর্কে চিন্তা করতে শুরু করুন।
শেয়ার মার্কেট (Dhaka Stock Exchange) বিনিয়োগ আপনাকে ধনী করে তুলতে পারে—এটা কতটুকু সত্য? তবে বর্তমানে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে গিয়ে অনেক বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর ফলে নতুন জুয়াড়িরা আবির্ভূত হয়েছে। আজকের আলোচনা হবে কীভাবে সঠিক বিনিয়োগের মাধ্যমে আপনি ধনী হতে পারেন।
মনে রাখবেন আপনি যদি সফলতা অর্জন করতে ব্যর্থ হন তাহলে আপনার ব্যর্থতা দেখার জন্য সবাই পপকর্ন নিয়ে বসবে
কীভাবে আর্থিক ভাবে মুক্তি পাবেন?
টাকা (Currency) একটি ছোট শব্দ, তবে এর ব্যবহার আমাদের জীবনে অপরিসীম। জীবনে আমরা দুই ধরনের মানুষের মুখোমুখি হই। প্রথমত: এমন মানুষ, যারা টাকা (Money) আছে কিন্তু জ্ঞান নেই; এর মানে তারা টাকা খরচ করে জ্ঞান অর্জন করে। দ্বিতীয়ত: এমন মানুষ, যাদের টাকা নেই কিন্তু জ্ঞান আছে; তারা নিজেদের জ্ঞান বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে।
বাংলাদেশ দারিদ্র্যের হার হ্রাসে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে। বিশ্বব্যাংক (World Bank) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
একটি জরিপে (The Spectator Index) দেখা গেছে, বিশ্বের চূড়ান্ত দেশের তালিকার মধ্যে সর্বাধিক দারিদ্র্যের (Bangladesh: 2.3%) বসবাসকারী লোকেদের মধ্যে (World Poverty Clock) ষষ্ঠ স্থান দখল করেছে বাংলাদেশ। আপনি যদি ভেবে থাকেন, দেশের সরকার জনগণের জন্য কাজ করবে এবং এর ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মান ও আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে, তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন!
মনে রাখবেন, বাংলাদেশের সরকার (Bangladesh Government) ভোট চাওয়া ছাড়া আপনার কোন উপকারে আসবে না। আপনার আর্থিক অবস্থা উন্নত করার জন্য আপনাকেই উদ্যোগ নিতে হবে।
খরচের পর যা অবশিষ্ট থাকে সেটা সঞ্চয় না করে বরং সঞ্চয়ের পর যা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে খরচ করুন।
নিষ্ঠুর আর্থিক পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবেন? [Financial Investment]
আমাদের এই দরিদ্র দেশে অনেকেই রয়েছেন যারা অবসর গ্রহণের পরে আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হন। এর ফলে আমরা অপ্রত্যাশিত পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হই। যদি আমরা এই নিষ্ঠুর আর্থিক (Financial Harassment) পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে চাই, তবে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, কিভাবে আমাদের জীবনে আর্থিক স্বচ্ছলতা (Financial Solvency) আনা যায়? কিভাবে আমরা আজ থেকে ২৫-৩০ বছর বয়সের পর আমাদের পরিবার অথবা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আর্থিক মুক্তি নিশ্চিত করতে পারি?
আমরা কি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ হতে পারি? আমাদের জন্য কোন পথটি সঠিক? উত্তরগুলো খুবই সহজ। আসুন, একটু মনোযোগ সহকারে জানি। মনে করুন, আপনার বর্তমান বয়স ৩০ বছর এবং আপনি আপনার পরিবারের জন্য ৬০ বছর বয়সের পরে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য আর্থিকভাবে সুখী হতে চান। আপনাকে একটি সহজ উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি।
আমি ১১ বছর বয়সে প্রথম বিনিয়োগ করি, তার আগ পর্যন্ত আমি শুধু সময় নষ্ট করেছি।
হিসাব পদ্ধতি
ধরে নিচ্ছি, আপনি একটি কোম্পানিতে (Private Company) চাকরি করছেন এবং আপনার বর্তমান বয়স ৩৫ বছর। আপনি মাসে ৫,০০০ টাকা উপার্জন করছেন (এখানে আমি সর্বনিম্ন ধরে হিসেব করছি; আপনি চাইলে আপনার আর্থিক অবস্থার ভিত্তিতে আরও বেশি ধরে নিতে পারেন)। আপনার এই উপার্জনটি খুবই সামান্য। তবে, প্রতি বছর আপনার উপার্জন হচ্ছে ৬০,০০০ টাকা।
ধরি, আপনি ৬০ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করবেন। আমরা জানি, একজন মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৬০ বছর (+-)। তাহলে, যদি আপনি ২৫-৩০ বছর বয়স পর্যন্ত আপনার জীবনকে সম্পূর্ণরূপে আর্থিক স্বাধীনতা দিতে চান, তাহলে বর্তমান আয় (প্রতি মাসে): ৫,০০০ টাকা (৫,০০০ টাকা × ১২ মাস = ৬০,০০০ টাকা)। আমাদের আর্থিক ব্যয় কাটানোর জন্য কমপক্ষে বর্তমান আয়ের ৭০ শতাংশ প্রয়োজন।
যদি আমরা ২৫-৩০ বছর বাঁচতে পারি, আপনার প্রয়োজন হবে (৭০% × ৬০,০০০) এক বছরে × ৩০ বছর = ১২,৬০,০০০ টাকা। তাহলে, আমরা পাই ১২,৬০,০০০ টাকা। মুদ্রাস্ফীতির কারণে, আপনার প্রয়োজনীয় পরিমাণ হবে ২.৫ গুণ বেশি, অর্থাৎ ১২,৬০,০০০ টাকা × ২.৫ = ৩১,৫০,০০০ টাকা!
এখানে একটি বিষয় মনে রাখা ভালো: একটি সময় ছিল যখন আমরা সিনেমা দেখার জন্য ৫০০ টাকার টিকিট কিনতাম, আর এখন টিকিটের দাম ১,০০০ টাকার বেশি। তাই, আমরা দেখতে পাই টিকিটের দাম (মুদ্রাস্ফীতি) ২ গুণ বেড়ে গেছে।
২৫-৩০ বছর বয়সের পর আর্থিকভাবে স্বাচ্ছন্দ্য বোধের জন্য আমাদের ৩১,৫০,০০০ টাকা অর্জন করতে হবে, শুধুমাত্র প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা (সাধারণ ও সর্বনিম্ন) উপার্জনের মাধ্যমে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এটি সম্ভব!
কখনোই আয়ের একমাত্র উৎসের উপর নির্ভর করবেন না। বিনিয়োগের মাধ্যমে আরেকটি উৎস তৈরী করুন।
কিভাবে শেয়ার (Share) বাজার থেকে অর্থ উপার্জন করবেন?
এখন আসুন দেখা যাক, কীভাবে আপনি শেয়ার বাজার (Share Bazar) থেকে আরও বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারেন। আমি এখানে সর্বনিম্ন অতি সাধারণ একজন ব্যক্তির হিসেবে প্রতি মাসে উপার্জন ধরে এই পরিমাণ টাকা বের করেছি।
আপনার সুবিধা অনুসারে, প্রতি মাসে অর্জিত উপার্জন যুক্ত করে হিসাব করতে পারেন। আর্থিকভাবে সুরক্ষিত এবং মুক্ত হওয়ার জন্য অবশ্যই বিনিয়োগ করতে হবে। এখন আমি দেখাব কিভাবে শেয়ার বাজার থেকে আপনি আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন করতে পারেন একটি উদাহরণ হিসেবে।
যদি তুমি আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পার, তবে আর্থিক অবস্থাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।
কিভাবে শেয়ার বাজার থেকে অর্থ উপার্জন করবেন?
শেয়ার বাজারে (Dhaka Stock Market) বিনিয়োগের মাধ্যমে রিটার্নের শতকরা হার প্রতি বছর নয় হাজার টাকা (১৫%) করে জমা করলে বিভিন্ন হিসাব অনুযায়ী অর্জিত অর্থের পরিমাণ নিম্নরূপ:
বিবরণ | শতকরা হার (%) | অর্জিত অর্থের পরিমাণ (টাকা) |
---|---|---|
প্রথম হিসাব (কেবল আমানত) | ০% | ২,৩৪,০০০ |
দ্বিতীয় হিসাব (শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে রিটার্ন - সহজ) | ১১% | ২৫,৩৪,১১৯ |
তৃতীয় হিসাব (শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে রিটার্ন - মধ্যম) | ১৫% | ২৫,৩৪,১১৯ |
চতুর্থ হিসাব (শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে রিটার্ন - শুধুমাত্র অভিজ্ঞদের জন্য) | ২০% | ৬১,২৭,৬৭৪ |
চতুর্থ হিসাব অনুযায়ী (২০% রিটার্ন), অর্জিত অর্থের পরিমাণ হলো ৬১,২৭,৬৭৪ টাকা, যা শুধুমাত্র অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রযোজ্য। উপরের উদাহরণের মাধ্যমে বোঝা যায়, শেয়ার বাজার থেকে আমরা কত পরিমাণ অর্থ অর্জন করতে পারি।
অর্থ আপনার সিদ্ধান্ত আপনার
সতর্কীকরণ
শেয়ার মার্কেট (Bangladesh Stock Exchange) এ বিনিয়োগ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যখন আপনি শেয়ার মার্কেটে লেনদেন করবেন, তখন অন্যদের কথায় প্রভাবিত না হয়ে, আপনার নিজস্ব বুদ্ধি এবং ইচ্ছার উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ করুন। কোনো আর্থিক ক্ষতির জন্য (বিনিয়োগকারী.কম) দায়ী থাকবে না। একটি কথা সবসময় মনে রাখবেন:
পুঁজিবাজারে (Pujibazar) বিনিয়োগকারীদের সকলকে অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, ফেসবুক, এসএমএস, বা অন্য কোনো অসমর্থিত সূত্রের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করা হলে বিনিয়োগকারীরা ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। তাই এসব গুজবের ভিত্তিতে বিনিয়োগ না করে কোম্পানির এনালাইসিস এবং মৌলিক ভিত্তির উপর পর্যালোচনা করে বিনিয়োগ করা উচিত।
বিনিয়োগকারী.কম ওয়েবসাইটে প্রদত্ত তথ্যগুলো ক্যাপিটাল মার্কেটে Capital Market গতিবিধি সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা প্রদানের চেষ্টা করেছে।
শেষ কথা
বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ২০২১ সালে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ হবে, যা আইএমএফ এর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক আউটলুকে উল্লেখ করা হয়েছে। তবুও, বাংলাদেশের আর্থিক খাত এখনও একটি নবজাতক পর্যায়ে রয়েছে।
ভারতের উদাহরণে নজর দিলে, আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের অবস্থান কোথায়। আইএমএফের সর্বশেষ অনুমান অনুযায়ী, ২০২১ সালে ভারতের প্রবৃদ্ধি হবে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। মনে রাখবেন, ❝ শেয়ার বাজারে কোনো অভিভাবক নেই ❞। কখনো অন্যের কথায় প্রভাবিত হয়ে শেয়ার মার্কেটে ঝাঁপ দেবেন না।
আপনার পা পানিতে ডুবিয়ে কখনোই নদীর গভীরতা মাপবেন না।
এক নজরে দেখে নিন
মনের অজান্তে তৈরি হওয়া কিছু প্রশ্ন | হ্যাঁ | না |
---|---|---|
আমি টেকনিক্যাল এবং ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস বুঝি না, আমার কি ক্যাপিটাল মার্কেটে ইনভেস্ট করা উচিত? | ❌ | ✔ |
ব্রোকারেজ হাউজে কর্মরত কোনো বড় ভাই অথবা অফিসিয়াল ট্রেডার অথবা টেলিভিশন/সোশ্যাল মিডিয়া কোথায় কোন স্টকে ইনভেস্ট করা উচিত? | ❌ | ✔ |
আমি নতুন পুঁজিবাজারে এসেছি, আমার কি ডে ট্রেডিং (২ দিন) করা উচিত? | ❌ | ✔ |
শেয়ারের দাম কমে গেলে আমার কি স্টপ লস ব্যবহার করা উচিত? | ✔ | ❌ |
নতুন বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারে কি উইক ট্রেডিং (সপ্তাহ) করা উচিত? | ❌ | ✔ |
আমি যতটুকু জানি, ততটুকু শেয়ার করার চেষ্টা করলাম। আশা করছি আপনাদের ভালো লেগেছে। বিনিয়োগকারী.কম শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে গণসচেতনামূলক পোস্ট করার চেষ্টা করছে, শুধুমাত্র নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য। যারা শেয়ার (Share Market) মার্কেটে জুয়াড়ির মনোভাব নিয়ে বিশ্লেষণ করেন, তাদের থেকে যত দূরে থাকবেন, ততই ভালো। একটি কথা সবসময় মনে রাখবেন: ❝ অর্থ আপনার সিদ্ধান্ত আপনার ❞