ইলন মাস্কের Starlink ইন্টারনেট বাংলাদেশে: সুবিধা কি, খরচ কত?
Starlink একটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা যা পৃথিবীর কক্ষপথে ছোট ছোট স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সিগন্যাল পাঠায়। এই স্যাটেলাইটগুলোর মাধ্যমে এমন জায়গাতেও ইন্টারনেট পৌঁছানো সম্ভব যেখানে সাধারণ ওয়্যারলেস বা ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছানো কঠিন। এটি স্পিড, স্থায়িত্ব এবং কভারেজের দিক থেকে অনেক উন্নত এবং টেলিকম পরিষেবার তুলনায় বেশি নির্ভরযোগ্য হতে পারে। বাংলাদেশে এটি কবে শুরু হবে, কীভাবে এর সুবিধা পাওয়া যাবে এবং খরচ কত হবে, তা নিয়ে এখনো নানা প্রশ্ন রয়েছে।
Starlink ইন্টারনেট বাংলাদেশে কবে আসবে? খরচ কেমন হবে? স্পিড ও সুবিধাগুলো কি? ইলন মাস্কের এই স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

Starlink কী?
Starlink হলো SpaceX-এর মালিকানাধীন একটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা, যা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেট প্রদান করে। এটি বিশেষভাবে সেইসব এলাকায় কার্যকর যেখানে প্রচলিত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যায় না।
Starlink-এর Country of Origin
Starlink প্রকল্পের সূচনা এবং পরিচালনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্পেস এক্স (SpaceX)। এটি মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান, যা মহাকাশ গবেষণা এবং স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
Starlink-এর অবস্থান
Starlink স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে (Low Earth Orbit - LEO) অবস্থিত। এটি Sun-Synchronous Orbit (SSO)-এ কাজ করে, যা স্যাটেলাইটগুলিকে নির্দিষ্ট গতিতে পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে সাহায্য করে এবং সুনির্দিষ্ট সময় পরপর নির্দিষ্ট জায়গার উপর দিয়ে যেতে দেয়।
Starlink এর খরচ
Starlink ইন্টারনেটের মাসিক খরচ সাধারণত ১০০-১২০ ডলার (প্রায় ১১,০০০-১৩,০০০ টাকা) হতে পারে, তবে এই খরচ ভিন্ন ভিন্ন দেশ এবং অঞ্চলের উপর নির্ভর করতে পারে। এছাড়া, স্টার্টার কিট (যার মধ্যে স্যাটেলাইট ডিশ, রাউটার এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি থাকে) এর দাম প্রায় ৫৯৯ ডলার (প্রায় ৬৬,০০০ টাকা) হতে পারে
সেবা | খরচ (USD) | খরচ (BDT) |
---|---|---|
ইনস্টলেশন ফি | $499 | ৳58,500 (প্রায়) |
মাসিক সাবস্ক্রিপশন | $110 | ৳12,900 (প্রায়) |
ডিভাইস এবং সেটআপ ফি | $50 | ৳5,900 (প্রায়) |
Starlink ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য কিছু প্রধান ডিভাইস:
ডিভাইস | বিবরণ |
---|---|
Starlink কিট | এই কিটে স্যাটেলাইট ডিশ, Wi-Fi রাউটার এবং পাওয়ার সাপ্লাই অন্তর্ভুক্ত থাকে। |
স্যাটেলাইট ডিশ (Dish) | এটি স্যাটেলাইটের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। |
Wi-Fi রাউটার (Router) | ডিশের সাথে সংযুক্ত হয়ে ইন্টারনেট সিগন্যাল ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। |
পাওয়ার সাপ্লাই (Power Supply) | রাউটার এবং ডিশে শক্তি সরবরাহ করে। |
Wi-Fi রাউটার | একাধিক ডিভাইসে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে একটি ওয়াই-ফাই রাউটার প্রয়োজন। |
বাসায় ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত ডিভাইস | স্টার্টার কিট বা Wi-Fi এক্সটেন্ডার বা রিপিটার ব্যবহার করা যেতে পারে। |
স্টার্টার কিট (Satellite Dish and Router) | Starlink কিটের মধ্যে ডিশ এবং রাউটার অন্তর্ভুক্ত থাকে। |
Wi-Fi এক্সটেন্ডার বা রিপিটার | বাড়ির বড় এলাকা কাভার করার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। |
বাসার জন্য আদর্শ ডিভাইস নির্বাচন | বাড়ির আকার এবং ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুসারে উপযুক্ত ডিভাইস নির্বাচন করুন। |
বাসার আকার | ছোট বা মাঝারি আকারের বাড়ির জন্য Starlink রাউটার যথেষ্ট হবে। |
ব্যবহারকারীর সংখ্যা | একাধিক ডিভাইস থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করলে শক্তিশালী রাউটার এবং এক্সটেন্ডার প্রয়োজন। |
Starlink এর স্পিড এবং কার্যকারিতা
Starlink ইন্টারনেট সাধারণত ৫০ Mbps থেকে ২৫০ Mbps পর্যন্ত ডাউনলোড স্পিড প্রদান করে এবং ১০ Mbps থেকে ৫০ Mbps পর্যন্ত আপলোড স্পিড পাওয়া যেতে পারে। এই গতি যথেষ্ট দ্রুত এবং ইউটিউব ভিডিও স্ট্রিমিং, ডাউনলোডিং, গেমিং, এবং অন্যান্য ইন্টারনেট কার্যকলাপের জন্য উপযুক্ত। এছাড়া, এর লেটেন্সি, যা সাধারণত স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের জন্য একটি সমস্যা, Starlink এ কম, ২০ থেকে ৪০ মিলি সেকেন্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।

Starlink এর কার্যকারিতা বাংলাদেশে
Starlink বাংলাদেশে কার্যকরী হতে পারবে কিনা, তা নির্ভর করে বেশ কিছু বিষয়গুলোর উপর। এখানে কিছু মূল দিক তুলে ধরা হলো:
- গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট সেবা: বাংলাদেশের অনেক গ্রামীণ অঞ্চল এখনও উচ্চমানের ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত। Starlink এই অঞ্চলে উচ্চ গতি ও নির্ভরযোগ্য সেবা প্রদান করতে সক্ষম, যা বাংলাদেশের ডিজিটাল বৈষম্য কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- আইনগত বাধা: বাংলাদেশে Starlink চালু হওয়ার আগে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু অনুমোদন এবং আইনি পরিবর্তন দরকার হতে পারে। তাই, এর আগমন কিছুটা সময়সাপেক্ষ হতে পারে।
- পরিবেশগত প্রতিকূলতা: যদিও Starlink প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে কার্যকর, তবে মাঝে মাঝে আবহাওয়ার কারণে সিগন্যাল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এতে ইন্টারনেট সংযোগের সাময়িক বিভ্রাট ঘটতে পারে।
- ব্যবহারকারীদের জন্য খরচ: বর্তমান পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের গড় মানুষের জন্য Starlink এর খরচ কিছুটা বেশি হতে পারে। এটি সবার জন্য সহজলভ্য নাও হতে পারে, বিশেষ করে যদি সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের ভর্তুকি না দেয়া হয়।
Starlink নির্মাণ ও স্থাপনে মোট ব্যয়
Starlink প্রকল্পটি অত্যন্ত উচ্চমূল্যের, যার নির্মাণ ও স্থাপনে আনুমানিক 10 বিলিয়ন মার্কিন ডলার (USD) ব্যয় হয়েছে। এই বিশাল বিনিয়োগের মাধ্যমে SpaceX বিশ্বজুড়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বিপ্লব ঘটানোর চেষ্টা করছে।
Starlink ইন্টারনেট সংযোগ গ্রহণের খরচ
Starlink ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য প্রথমে আপনাকে একটি Starlink Kit কিনতে হবে, যার মূল্য প্রায় 499 মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪২,০০০ টাকা (বাজার দর অনুযায়ী পরিবর্তনশীল)।
Starlink কেন এত ব্যয়বহুল?
Starlink ইন্টারনেটের দাম অন্যান্য সাধারণ ইন্টারনেট সেবা থেকে বেশি হওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। এখানে কিছু প্রধান কারণ তুলে ধরা হলো:
- স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে: Starlink ইন্টারনেট সেবা সরবরাহ করতে স্যাটেলাইট ব্যবহৃত হয়, যা অত্যন্ত খরচসাপেক্ষ এবং প্রযুক্তিগতভাবে জটিল।
- উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন: Starlink উচ্চ গতি এবং কম লেটেন্সি (Latency) ইন্টারনেট প্রদান করে, যা প্রথাগত ইন্টারনেট সেবার তুলনায় উন্নত।
- বিশ্বব্যাপী কভারেজ: Starlink এমন একটি সেবা যা পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় ইন্টারনেট সেবা দিতে সক্ষম, বিশেষ করে দূরবর্তী ও গ্রামাঞ্চল এলাকায়।
- স্টার্টআপ খরচ: Starlink একটি নতুন উদ্যোগ, এবং এর জন্য ব্যাপক ইনভেস্টমেন্ট এবং প্রযুক্তি উন্নয়ন খরচ রয়েছে।
- নিম্ন কক্ষপথে স্যাটেলাইট স্থাপন: প্রচলিত ভূ-স্থির (Geostationary) স্যাটেলাইটের তুলনায় এই স্যাটেলাইটগুলো অনেক বেশি খরচ সাপেক্ষ, কারণ এগুলোকে বারবার আপডেট ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়।
- অবকাঠামো ও সেবা নিশ্চিতকরণ: Starlink সেবার মান বজায় রাখতে অনেক অবকাঠামো ও খরচ রয়েছে, যার কারণে দাম বেশি হতে পারে।
- বিশ্বব্যাপী কাভারেজ: Starlink এমনসব অঞ্চলকেও ইন্টারনেট সংযোগ দিচ্ছে, যেখানে অপটিক্যাল ফাইবার বা মোবাইল নেটওয়ার্ক পৌঁছাতে পারেনি।
- SpaceX-এর রকেট উৎক্ষেপণ খরচ: প্রতিটি Starlink স্যাটেলাইটকে মহাকাশে পাঠানোর জন্য SpaceX-এর ফ্যালকন 9 রকেট ব্যবহার করা হয়, যা বিশাল ব্যয়ের বিষয়।
Starlink ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য প্রধান ডিভাইসগুলো:
বাংলাদেশে Starlink ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য কিছু বিশেষ ডিভাইস নির্বাচন করা যেতে পারে যা আপনার ইন্টারনেট ব্যবহার অভিজ্ঞতাকে আরও সহজ এবং কার্যকর করবে।1. Starlink কিট (Satellite Dish and Router):
Starlink ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য প্রথমে Starlink কিট কিনতে হবে। এই কিটে স্যাটেলাইট ডিশ এবং Wi-Fi রাউটার রয়েছে, যা সরাসরি স্যাটেলাইটের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। একবার এটি সেটআপ হয়ে গেলে, আপনি দ্রুত ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করতে পারবেন। এটি বাংলাদেশে Starlink ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য প্রথমে প্রয়োজনীয় ডিভাইস।
2. Wi-Fi এক্সটেন্ডার বা রিপিটার:
যদি আপনার বাড়ির আকার বড় হয় এবং Wi-Fi সিগন্যালের পরিসীমা সীমিত হয়, তবে একটি Wi-Fi এক্সটেন্ডার বা রিপিটার ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি সিগন্যালের রেঞ্জ বাড়িয়ে দেবে, বিশেষ করে বড় বাড়ি বা একাধিক তলায়। এর মাধ্যমে বাড়ির সব জায়গায় ভাল সিগন্যাল পৌঁছাতে সাহায্য করবে।
3. Wi-Fi রাউটার:
যদি একাধিক ডিভাইস থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চান (যেমন মোবাইল, ল্যাপটপ, টিভি ইত্যাদি), তবে একটি শক্তিশালী Wi-Fi রাউটার প্রয়োজন। Starlink রাউটারটি ব্যবহার করে, এটি অন্যান্য ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত হয়ে ইন্টারনেট সিগন্যাল প্রদান করবে।
4. স্টার্টার কিট (Satellite Dish and Router):
Starlink ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য এটি প্রথমে প্রয়োজনীয় ডিভাইস। এই কিটে স্যাটেলাইট ডিশ এবং রাউটার অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা স্যাটেলাইটের সাথে সংযোগ স্থাপন করে এবং আপনার বাড়িতে ইন্টারনেট সিগন্যাল পৌঁছে দেয়। এটি Starlink ব্যবহারের জন্য অপরিহার্য।
প্রোডাক্টের বিবরণ
- অর্ডার করার আগে আপনার এলাকায় সেবার কভারেজ পরীক্ষা করুন।
- দুটি সার্ভিস প্ল্যান উপলব্ধ: রেসিডেন্সিয়াল (Residential) & রোম (Roam)
- রোম (Roam): স্টারলিংক কভারেজযুক্ত যেকোনো স্থানে ব্যবহারের জন্য, তাৎক্ষণিকভাবে উপলব্ধ।
- রেসিডেন্সিয়াল (Residential): নির্দিষ্ট একটি স্থানে ব্যবহারের জন্য, তবে এটি সব এলাকায় পাওয়া নাও যেতে পারে।
- পরিষ্কার আকাশের নিচে যেকোনো জায়গায় কাজ করে।

প্রোডাক্টের স্পেসিফিকেশন
বৈশিষ্ট্য | বিবরণ |
---|---|
পণ্যের আকার (L x W x H) | ২৪ x ১৪ x ১১ ইঞ্চি (৬১ x ৩৫.৬ x ২৭.৯ সেমি) |
ওজন | ১৮ পাউন্ড (৮.১৬ কেজি) |
মডেল নাম্বার | V2 |
প্রথম উপলব্ধতার তারিখ | ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ |
প্রস্তুতকারক | Starlink |
অ্যান্টেনা টাইপ | স্যাটেলাইট |
ব্র্যান্ড | Generic |
রঙ | সাদা, ধূসর |
সর্বোচ্চ পরিসর | ২০০ ফুট |
মোট আইটেম সংখ্যা | ৫ |
বাংলাদেশের জন্য Starlink কতটা উপযোগী?
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকাগুলোর জন্য Starlink একটি সম্ভাবনাময় সমাধান হতে পারে। তবে বর্তমান মূল্যের কারণে এটি সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য কিছুটা ব্যয়বহুল হতে পারে। যদি বাংলাদেশে অফিশিয়ালি Starlink পরিষেবা শুরু হয় এবং স্থানীয়ভাবে দাম কিছুটা কমে, তবে এটি দেশের ইন্টারনেট অবকাঠামোতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে।
Starlink ইন্টারনেটের সুবিধা
- উচ্চ গতি ও কম লেটেন্সি: Starlink ব্যবহারকারীরা 100 Mbps থেকে 200 Mbps পর্যন্ত গতি পেতে পারেন, যা আধুনিক ইন্টারনেটের জন্য অত্যন্ত দ্রুত। এছাড়া, এর লেটেন্সি মাত্র 20 থেকে 40 মিলি সেকেন্ড, যা অন্যান্য স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবার তুলনায় অনেক কম।
- গ্রামীণ অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা: বাংলাদেশে শহরের বাইরে গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা প্রায় একেবারেই অনুপস্থিত। Starlink এই সমস্যার সমাধান করতে পারে, কারণ এটি পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করতে সক্ষম।
- অফলাইন জরুরি সেবা: বাংলাদেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে যেমন বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের সময় অনেক সময় ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। Starlink এই ধরনের পরিস্থিতিতে জরুরি সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সাহায্য করতে পারে।
- সহজ ইনস্টলেশন: Starlink-এর স্যাটেলাইট ডিশটি সহজেই ইনস্টল করা যায় এবং কোন তার বা ওয়্যারিং এর প্রয়োজন পড়ে না। এটি ব্যবহারকারীর জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক।
- বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুবিধা: Starlink দেশের বিভিন্ন প্রান্তের স্কুল, কলেজ, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করতে সাহায্য করবে, যা অনলাইন শিক্ষা এবং গবেষণার জন্য উপকারী হতে পারে।
Starlink ইন্টারনেটের অসুবিধা
১. ব্যয়বহুল সেবা
- প্রাথমিক খরচ: Starlink ব্যবহারের জন্য প্রথমে ৪৯৯ ডলার (প্রায় ৪২,০০০ টাকা) খরচ করতে হয়।
- মাসিক ফি: প্রতি মাসে ৯৯-১২০ ডলার (প্রায় ১০,০০০-১৩,০০০ টাকা) দিতে হয়।
২. আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল
ঝড়, বৃষ্টি বা তুষারপাত হলে ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
৩. উচ্চ ল্যাটেন্সি (Latency) সমস্যা
লাইভ স্ট্রিমিং ও গেমিং-এর জন্য উপযুক্ত নয়, কারণ ল্যাটেন্সি ২০-৫০ মিলিসেকেন্ড হতে পারে।
৪. বিদ্যুৎ নির্ভরতা
লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় ব্যাকআপ ছাড়া এটি কাজ করবে না।
৫. ইনস্টলেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ
ডিশ ও রাউটার সেটআপ করা তুলনামূলক কঠিন এবং বড় জায়গা প্রয়োজন।
৬. সরকারি বিধিনিষেধ ও অনুমোদন সমস্যা
অনেক দেশে এখনো Starlink অনুমোদন পায়নি, ফলে সেখানে এটি ব্যবহার করা যায় না।
৭. স্যাটেলাইট ট্রাফিক ও পরিবেশগত সমস্যা
নিম্ন কক্ষপথে হাজার হাজার স্যাটেলাইট থাকায় মহাকাশ গবেষণায় সমস্যা হতে পারে।

Starlink এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
Starlink একটি ভবিষ্যতপ্রযুক্তি, যা সারা বিশ্বে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাবে। যদিও এর খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি, তবে এটি বিশেষভাবে প্রয়োজনীয় হবে প্রত্যন্ত অঞ্চল ও দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় যেখানে প্রচলিত ইন্টারনেট ব্যবস্থা কাজ করে না।
যদি Starlink বাংলাদেশে সফলভাবে চালু হয়, তবে এটি দেশের ডিজিটাল উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, এবং অন্যান্য সেক্টরে বিপ্লব সৃষ্টি করতে পারে। এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষত, গ্রামাঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য অনলাইন শিক্ষা সুবিধা বাড়ানো সম্ভব হবে।
Starlink-এর সেবা যদি স্থিতিশীল এবং সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়, তাহলে এটি বাংলাদেশের ডিজিটাল পরিবেশে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে।
Starlink ইন্টারনেট সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর
Starlink হলো SpaceX-এর একটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা, যা উচ্চ গতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সরবরাহ করে।
বর্তমানে বাংলাদেশে Starlink অফিসিয়াল পরিষেবা চালু হয়নি। তবে ভবিষ্যতে এটি চালু হতে পারে।
সাধারণত ৫০ Mbps থেকে ২৫০ Mbps পর্যন্ত ডাউনলোড স্পিড পাওয়া যায় এবং আপলোড স্পিড ১০ Mbps থেকে ৫০ Mbps পর্যন্ত হতে পারে।
Starlink ব্যবহারের জন্য একটি Starlink কিট প্রয়োজন, যার মধ্যে স্যাটেলাইট ডিশ, রাউটার এবং পাওয়ার সাপ্লাই অন্তর্ভুক্ত থাকে।
Starlink-এর মাসিক চার্জ ১০০-১২০ ডলার (প্রায় ১১,০০০-১৩,০০০ টাকা) হতে পারে। এছাড়া স্টার্টার কিটের দাম ৫৯৯ ডলার (প্রায় ৬৬,০০০ টাকা) হতে পারে।
Starlink মূলত ব্রডব্যান্ড পরিষেবা, তবে এটি ভবিষ্যতে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবাও দিতে পারে।
Starlink কিট ইনস্টল করতে হলে আকাশ পরিষ্কার থাকতে হবে এবং ডিশ সঠিকভাবে সেটআপ করতে হবে যাতে এটি স্যাটেলাইটের সংযোগ পায়।
হ্যাঁ, তবে এটি মূলত গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভালো কাজ করে, যেখানে ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট নেই।
গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্রুতগতির ইন্টারনেট
তারবিহীন সংযোগ
লো-ল্যাটেন্সি ব্রডব্যান্ড সার্ভিস
হ্যাঁ, খারাপ আবহাওয়া যেমন বৃষ্টি, ঝড় এবং তুষারপাত Starlink সংযোগে প্রভাব ফেলতে পারে।
Starlink পরিষেবা বিশ্বব্যাপী উপলব্ধ, তবে কিছু দেশে এটি এখনও পরীক্ষামূলক অবস্থায় রয়েছে।
Starlink কিটের দাম ৫৯৯ ডলার (প্রায় ৬৬,০০০ টাকা) হতে পারে, তবে কিছু দেশে দাম ভিন্ন হতে পারে।
Starlink ইন্টারনেটের সাবস্ক্রিপশন বাতিল করা হলে, আপনি পরবর্তী মাসের জন্য পরিষেবা পেতে পারবেন না, তবে ইতিমধ্যে প্রদান করা চার্জ ফেরত পাওয়া যায় না।
Starlink কিটটি Starlink-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি অর্ডার করা যেতে পারে।
হ্যাঁ, Starlink ইন্টারনেট মোবাইল ডিভাইসসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রের সাথে সংযুক্ত করা যায়, তবে একটি Wi-Fi রাউটার ব্যবহার করতে হবে।