বাংলাদেশ শেয়ারবাজারের সম্পূর্ণ ধারণা ♥ Investing in Stocks
পুঁজিবাজারের বেহাল দশা নিয়ে লোকজনের আলোচনা চলছে! আসলে কি পুঁজিবাজার (Pujibazar) শুধুই জুয়াড়িদের আড্ডাখানা, নাকি এটি একটি সরকারি লাইসেন্সধারী রিয়েল টাইম ক্যাসিনো (Casino)? আজ আমি আপনাদের সাথে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
প্রথমত, ক্যাসিনোর (Casino) কিছু গোপন তথ্য এবং দ্বিতীয়ত, একজন প্রফেশনাল ট্রেডার (Professional Trader) কিভাবে ক্যাসিনোর মত করে অর্থ উপার্জন করেন।
পুঁজিবাজার বনাম ক্যাসিনো
অনেকে বলেন যে পুঁজিবাজার (Pujibazar) এবং ক্যাসিনো (Casino) একই রকম। আমি বলব হ্যাঁ! পুঁজিবাজারকে আপনি বলতে পারেন লাইসেন্সধারী রিয়েল টাইম ক্যাসিনো (Casino)। এখন প্রশ্ন হলো, যারা ক্যাসিনো (Casino) তে জুয়া খেলছেন তারা কি সব সময় অর্থ হারান? উত্তরে আমি বলব, খেলোয়াড় (Player)রা প্রায়ই টাকা হারান। যদিও একজন খেলোয়াড় অল্প সময়ের জন্য অর্থ লাভ করতে পারেন, কিন্তু দীর্ঘ সময়ে অনেক অর্থের ক্ষতির সম্মুখীন হন। এটি সাধারণত ভাগ্যের উপর নির্ভর করে।
কিন্তু ক্যাসিনো (Casino) কি সব সময় টাকা লাভ করে? উত্তরটা হলো হ্যাঁ! "ক্যাসিনো (Casino) সব সময় জিততে থাকে।"
সব ব্রোকারেজ হাউসগুলো দিন শেষে লাভবান হয়। আরেকটু সহজ কথায় বলতে গেলে, “House Always Wins”।
যদি ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে Brokerage House ক্যাসিনোর (Casino) সাথে তুলনা করি, তাহলে দেখা যাবে সব ব্রোকারেজ হাউসগুলো দিন শেষে লাভবান হয়। সহজ কথায়, ❝ House Always Wins ❞। এর মানে হচ্ছে ক্যাসিনো (Casino) সব ক্ষেত্রে জয় নিশ্চিত। যখন আপনি কোন ক্যাসিনো (Casino) তে যাবেন, তখন দেখতে পাবেন যে খেলোয়াড়দের জন্য বিনামূল্যে বিশেষ বিনোদন, বিভিন্ন ধরনের খাবার, পানীয় ইত্যাদি বরাদ্দ করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হল খেলোয়াড়দের আকৃষ্ট করা। যত বেশি লোক এই ক্যাসিনো (Casino) খেলাটি খেলবে, তত বেশি লাভবান হবে ক্যাসিনোর মালিকগণ।
ক্যাসিনো কিভাবে কাজ করে?
একটি ক্যাসিনো (Casino) ১০০ শতাংশ গ্যারান্টি সহকারে দিনের শেষে অর্থ উপার্জন করে। প্রথমে ক্যাসিনো খেলাটি সম্পর্কে রুলেট (Roulette) জানিয়ে নিই। ক্যাসিনো (Casino) খেলাটি সাধারণত একটি রুলেট (ঘুরান যায় এমন চক্র, যা উপরের ছবিতে দেখানো হয়েছে) এবং স্পিনিং ডিভাইসের উপর নির্ভর করে, যেখানে একটি বলকে ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে খেলাটি পরিচালিত হয়।
একটি ক্যাসিনো কোম্পানি শতকরা ১০০% গ্যারান্টি সহকারে দিনের শেষে অর্থ উপার্জন করে, যা অনেকটা ব্রোকারেজ হাউজের মতো।
আমরা জানি, একটি রুলেট (Roulette) এর মধ্যে কালো, লাল, এবং সবুজ এই তিনটি রং এবং কিছু সংখ্যক জোড় (Even) ও বিজোড় (Odd) সংখ্যা অঙ্কিত থাকে। একটি ক্যাসিনো (Casino) বোর্ডে ১৮টি জোড় (Even) অথবা কাল সংখ্যা এবং ১৮টি বিজোড় (Odd) অথবা লাল সংখ্যা থাকে। এছাড়া, উপরে ও নিচে ২টি সবুজ রঙের শূন্য (০) এবং ডাবল শূন্য (০০) সংখ্যা থাকে। এই সংখ্যাগুলিকে ক্যাসিনো (Casino) সিক্রেট বলা হয়।
ক্যাসিনো কাজের পদ্ধতি
এই ক্যাসিনো (Casino) খেলাটি ❝ ৫০ শতাংশ জয় এবং ৫০ শতাংশ পরাজয়ের ❞ অনুপাতের ভিত্তিতে খেলা হয়, যা সবার মধ্যে একটি সাধারণ ধারণা। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। ধরুন, আপনি যখন একটি কালো রঙের সংখ্যার (Black Color Number) জন্য বিট করবেন। তখন ওই সংখ্যাটির জন্য জয়-পরাজয়ের অনুপাত নির্ধারিত হবে: খেলোয়াড়দের জন্য = ১৮/৩৮ [১৮ কাল রঙের জোড় সংখ্যা / (১৮ কাল রঙের জোড় সংখ্যা + ১৮ লাল বিজোড় সংখ্যা + ২ সবুজ সংখ্যা (০))] = ৪৭.৩%। এর মানে হল, ক্যাসিনো (Casino) তে জয় পাবার সুযোগ থাকবে: ক্যাসিনোর জন্য = ২০/৩৮ [২টি সবুজ সংখ্যা + ১৮ লাল বিজোড় সংখ্যা / (১৮ কাল জোড় সংখ্যা + ১৮ লাল বিজোড় সংখ্যা + ২ সবুজ সংখ্যা)] = ৫২.৭%। তাই, ক্যাসিনো (Casino) এবং খেলোয়াড়দের জয়ের অনুপাত হলো ক্যাসিনো (Casino) - খেলোয়াড় = ৫.৪%। আপনি কি বিস্মিত হচ্ছেন? অবিশ্বাস হলেও কথাটি সত্য।
ক্যাসিনো (Casino) খেলাটি ৫০% জয় এবং ৫০% পরাজয়ের অনুপাতের ভিত্তিতে খেলা হয়।
সুতরাং, সহজে বোঝা যাচ্ছে যে একটি ক্যাসিনো (Casino) এর মালিক ৫.৪% খেলোয়াড়দের উপর থেকে উপার্জন করে। উপরোক্ত হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে, ক্যাসিনো (Casino) এবং খেলোয়াড়দের জয়ের অনুপাত শতকরা (%) কত শতাংশ। এই কারণে ক্যাসিনো (Casino) ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত অর্থোপার্জন করে যাচ্ছেন। এখন প্রশ্ন হল, ৫.৪% আসলে কি? আসুন, একটু আলোচনা করি।
ক্যাসিনো খেলোয়াড়দের বেট ধরার কৌশল
আমরা জানি, ক্যাসিনো (Casino) খেলোয়াড়রা দীর্ঘ সময় ধরে একটার পর একটা বেট করে থাকে। তাহলে আমরা হিসাব করতে পারি যে, ক্যাসিনো (Casino) তে ১ টাকায় বেট করে ০.০০৫ পয়সা উপার্জন করে। যখন ১০ লক্ষ টাকায় বেট করা হয়, তখন ক্যাসিনো (Casino) অর্থ উপার্জন করে ৪৫,০০০ টাকা। তাই বোঝা যাচ্ছে যে, খেলোয়াড়রা যতবার বেট করবে, ক্যাসিনো (Casino) তত পরিমাণ অর্থ উপার্জন করবে। উদাহরণস্বরূপ, ধরুন, ক্যাসিনো (Casino) তে যদি ১,০০০ বেট করা হয় এবং প্রত্যেক বেট ১,০০০ টাকা করে ধরা হয়।
সফল বিনিয়োগের জন্য দরকার সময়, শৃঙ্খলা এবং ধৈর্য।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১০০০ বেট করে ক্যাসিনো (Casino) ৫২.৭% অর্থ লাভ করে এবং খেলোয়াড় ৪৭.৩% অর্থ লাভ করে। তাহলে এর থেকে বোঝা যায়, ক্যাসিনো (Casino) জয় করে ৫২৭ টি বেট এবং খেলোয়াড়রা জয় করে ৪৭৩ টি বেট। তাহলে ক্যাসিনো (Casino) জয় করে: ৫২৭ x ১০০০ = ৫,২৭,০০০ টাকা এবং খেলোয়াড়রা পরাজিত হয়: ৪৭৩ x ১০০০ = ৪,৭৩,০০০ টাকা।
তাহলে, সর্বমোট ক্যাসিনো (Casino) অর্থ লাভ করে: ৫,২৭,০০০ - ৪,৭৩,০০০ = ৫৪,০০০ টাকা। এটি হচ্ছে ক্যাসিনো (Casino) এর গোপন সূত্র।
পেশাদার ট্রেডার
এখন দেখুন কিভাবে একজন পেশাদার ট্রেডার (internal link) ক্যাসিনো (Casino) এর মতো সূত্র ব্যবহার করে পুঁজিবাজার (Pujibazar) থেকে লক্ষ লক্ষ উপার্জন করেন। প্রথমে আমি বলতে চাই, যারা বিনিয়োগ করেন, তাদের মধ্যে ৯২ শতাংশ বিনিয়োগকারী পুঁজি হারায়, ক্যাসিনো (Casino) খেলোয়াড়দের মতো। তাদের কিছু ভুলের কারণে, যেমন, তারা কোনও ধরনের বিশ্লেষণ (ফান্ডামেন্টাল অথবা টেকনিক্যাল) করতে জানেন না বা চার্ট সম্পর্কিত সঠিক জ্ঞান নেই।
তারা শুধুমাত্র BRO ভাইদের ❝ অমুক, আমার তমুক ❞ কথায় ক্রয়-বিক্রয় করেন, অথবা নিজেদের ইমোশনের উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ করেন। তারা কোনও টিপস (Capital Market Tips) অথবা ❝ অমুকের তমুক ❞ শেয়ারটি কিনছেন, অথবা কোন ❝ সামাজিক মাধ্যমে ভাসে আসা কথা ❞ ভেবে বিনিয়োগ করে থাকেন।
তোমার যা প্রয়োজন নেই, সেটা যদি তুমি ক্রমাগত ক্রয় করো, তবে তাড়াতাড়ি তোমার যা প্রয়োজন তা বিক্রি করতে হবে।
দিন শেষে বিনিয়োগকারীরা সেই ক্যাসিনো (Casino) এর খেলোয়াড়দের মতো অবস্থায় নিমজ্জিত হন, যা খুবই দুঃখজনক। একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী (Investors) যখন একটি শেয়ার নির্বাচন করেন, তখন সেই শেয়ারটির জয়ের অনুপাত ৫০% অথবা পরাজয়ের অনুপাত ৫০% হয়। এর মানে হল, শেয়ারটি উপরে ওঠার সম্ভাবনা ৫০% অথবা নিচে নামার সম্ভাবনা ৫০%।
এখন একটু ক্যাসিনো (Casino) দিকে আসা যাক। ধরুন, আপনি যদি ক্যাসিনো (Casino) তে বিজয়ী হন, তাহলে ❝ ১ টাকা বেট করে ১ টাকা পাবেন ❞। আবার, যদি আপনি পরাজিত হন, তাহলে ❝ ১ টাকা বেট করে ১ টাকা হারাবেন ❞। ঠিক তেমনি, একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী যখন পুঁজিবাজারে যায়, তখন তাদের অবস্থাও ক্যাসিনো (Casino) খেলোয়াড়দের মতো হয়ে থাকে—❝ সামান্য পরিমাণ লাভের আশায় হারিয়ে ফেলে সর্বস্ব ❞।
কেন পুঁজিবাজারকে জুয়াড়িদের বাজার বলা হয় ?
ধরুন, আপনি একটি কোম্পানির শেয়ার (Company Share) ক্রয় করে বসে আছেন এবং ভাবছেন, এই শেয়ারটির মূল্য যখন উপরে উঠবে, ঠিক তখনই আমি তা বিক্রয় করব। কিন্তু “ভাগ্যের নির্মম পরিহাস!!” বাজার শেষে দেখলেন, শেয়ারের দাম ক্রমাগত নিচের দিকে নামছে। আপনি ভাবলেন, কয়েক দিন শেয়ারটিকে হোল্ড করে রেখে দিই—❝ দেখি দাম বাড়ে কিনা! ❞ কিন্তু কয়েক দিন পর্যবেক্ষণ করার পর দেখলেন, শেয়ারের দাম অনেক নিচে নেমে গিয়েছে। এটাকে আমরা বলি, “লুসার বিট” অথবা “ফ্যাট লস” অথবা “বড় ধরনের পতন”।
এছাড়া আরো অনেক ধরনের বিনিয়োগকারী (Investors) আছেন যারা একটু প্রফিট (Small Profit) বুক করে মার্কেট থেকে বেরিয়ে যান। তারা মনে করেন, ৩-৪% মুনাফা অর্জনের মাধ্যমে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মার্কেট থেকে বের হয়ে আসা যায়। তারা সাধারণত মার্কেটকে ভয় পেয়ে থাকেন, যদি শেয়ারটির দাম নিচে পড়ে যায়। ঠিক সেই কারণে, প্রথম অবস্থায় তারা লাভজনক অবস্থানে থাকেন।
তোমার চেষ্টা আর প্রতিভা যতই প্রবল হোক না কেন, কিছু ব্যাপারে সফলতা আসতে সময় লাগে।
তবে দীর্ঘমেয়াদে তারা প্রচুর পরিমাণ অর্থ হারিয়ে মার্কেট থেকে চির বিদায় নেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, দিন শেষে তারাই পুঁজিবাজারকে ❝ জুয়াড়িদের বাজার ❞ বলে ডেকে থাকেন। একজন পেশাদার ট্রেডার (Professional Traders) সবসময় মোটা অঙ্কের টাকা খুব সহজেই উপার্জন করে থাকেন। এখন আমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, এটি কীভাবে সম্ভব? উত্তরটা হল—সম্ভব!
এটি সাধারণত ক্যাসিনোর মতো কাজ করে। একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী (Investors) যখন কোনো কোম্পানির শেয়ার কিনে, তখন ৫০% লাভ এবং ৫০% লোকসানের সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু একজন স্মার্ট বিনিয়োগকারী সব সময় মূল্য মুভমেন্ট এবং রিপিটেবল প্রাইস অ্যাকশন প্যাটার্ন দেখে ট্রেডিং করেন, যেটাকে আমরা বলি, টেকনিক্যাল এনালাইসিস (Technical Analysis)। অনেকেই আছেন যারা টেকনিক্যাল এনালাইসিস (Technical Analysis) সম্পর্কে জানেন না; তাদের অনুরোধ করছি, এই লিঙ্কটির মাধ্যমে বিস্তারিত জানার জন্য।
প্রাইস অ্যাকশন প্যাটার্ন দেখে ট্রেডিং করার পদ্ধতি
যখন একজন স্মার্ট বিনিয়োগকারী টেকনিক্যাল এনালাইসিস (Technical Analysis) চার্টে প্রয়োগ করেন, তখন যদি প্রাইস প্যাটার্ন পুনরাবৃত্তিমূলক (Repeatable Price Action Patterns) হয়, তাহলে পুরো সিস্টেমটি তাঁর অনুকূলে কাজ করবে। একটি উদাহরণ দেয়া যাক; এখানে আমি সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করেছি। পরবর্তী পোস্টে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে।
আশা করছি, সেই পর্যন্ত বিনিয়োগকারী.কম (Biniogkari.com) সঙ্গে থাকবেন। চার্টে সাধারণত তিন ধরনের প্যাটার্ন (Chart Patterns) তৈরি হয়। যেমন ধরুন, যখন একটি শেয়ারের চার্ট প্যাটার্ন উপরের দিকে উঠে অথবা হায়ার হাই (Higher-High) তৈরি করে, তখন সেই মুভমেন্টকে আমরা বলি আপট্রেন্ড প্যাটার্ন (Up-Trend Patterns) (উপরের চিত্রে দেওয়া আছে)।
যদি নিজেকে গর্তের মাঝে আবিষ্কার করেন, তবে প্রথমে গর্ত খোঁড়া বন্ধ করুন।
যদি একটি শেয়ারের চার্ট প্যাটার্ন (Chart Pattern) নিচের দিকে নেমে যায় অথবা লোয়ার-লো (Lower-Low) তৈরি করে, তাহলে সেই মুভমেন্টকে বলে থাকি ডাউনট্রেন্ড প্যাটার্ন (Down-Trend Patterns)। যখন একটি শেয়ারের চার্ট প্যাটার্ন উপরের দিকে বা নিচের দিকে না যায়, বরং অনেকটা মাঝামাঝি অবস্থানে বিরাজ করে, তাকে আমরা বলি সাইডওয়েজ প্যাটার্ন (Sideways Patterns)।
যেমন ধরুন, একটি বলকে যদি আপনি বক্সের ভিতরে রেখে দেন, দেখবেন সেই বলটি একটি রেঞ্জের মধ্যে বাউন্স খাচ্ছে। আমার জানামতে, এই তিনটি প্যাটার্ন ক্যাপিটাল মার্কেট (Capital Market)-এ কাজ করে। আপনারা যদি আরও কোনো ধরনের প্যাটার্ন সম্পর্কে জানেন, কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন। এই তিনটি প্যাটার্ন সম্পর্কে আমি বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
কিভাবে হাইয়ার-হাই তে শেয়ার কিনতে হয়?
যখন একটি শেয়ার উপরের দিকে অথবা আপট্রেন্ডে (Up-Trend) যায়, তখন ছবিটি (উপরে) এইরকম দেখা যায় এবং এখানে একটি সাপোর্ট লেভেল (Support Level) অথবা মুভিং এভারেজ (Moving Average) আঁকা রয়েছে। যখন আপনার প্যাটার্নটি একটি সাপোর্ট লেভেলে (Support Level) অথবা কোন মুভিং এভারেজ (Exponential Moving Average) উপরে থাকে, তখন আমরা ধারণা করতে পারি যে সেখান থেকে প্রাইস মুভমেন্ট (Price Movement) উপরের দিকে যেতে পারে অথবা নিচের দিকে নেমে আসতে পারে।
উপরের ছবিতে মাত্র দুটি অপশন রয়েছে: হয় উপরে যাবে অথবা নিচে আসবে। যখন একটি শেয়ারের মূল্য তার সাপোর্ট লেভেলে অথবা একটি ভাল মুভিং এভারেজের উপরে থাকে, তখন বুঝতে হবে যে শেয়ারটির মূল্য উপরের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যদি তুমি আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পার, তবে আর্থিক অবস্থাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।
একজন প্রফেশনাল ট্রেডার (Professional Traders) ঠিক তখনই শেয়ারটি ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিবেন। কিন্তু এটা কেউ ১০০ শতাংশ গ্যারান্টি সহকারে বলতে পারে না যে, শেয়ারটির মূল্য উপরে অথবা নিচে যাবে। কোন বিনিয়োগকারী যদি এই পুনরাবৃত্তি আপট্রেন্ড প্যাটার্ন (Repeatable Uptrend Pattern) অনুযায়ী কোন শেয়ার বাই করে, তাহলে জয় এবং পরাজয়ের দুটোই সম্ভাবনা থাকবে।
কিভাবে হিসাব করতে হবে?
ধরি, সাধারণত একটি কোম্পানির শেয়ারের মূল্য ৬০ শতাংশ (%) অথবা ৫৫ শতাংশ (%) উপরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে এবং তার সাথে ৪০ শতাংশ (%) অথবা ৪৫ শতাংশ (%) মূল্য নিচের দিকে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। অথবা আমরা যে ট্রেন্ডে প্যাটার্নটি (Trend Pattern) দেখতে পাচ্ছি, সেটি যেকোনো সময় নিচের দিকে পরিবর্তিত হতে পারে অথবা ডাউনট্রেন্ড (Down-Trend) দিকে যেতে পারে।
যদি তুমি তোমার ব্যবসার দুর্বলতা জানো, তবে ভয় নেই। কিন্তু না জানলে ঘোর বিপদে আছো।
তাহলে, আমরা ধরে নেই, একটি কোম্পানির শেয়ারের জন্য ৪০ শতাংশ (%) ক্ষতির এবং ৬০ শতাংশ (%) লাভের সম্ভাবনা আছে। তাহলে আমরা বলতে পারি, লাভ = ৬০ শতাংশ (%), ক্ষতি = ৪০ শতাংশ (%), সর্বমোট লাভের পরিমাণ = লাভ - ক্ষতি = ২০ শতাংশ (%) !!! আমরা দেখেছি যে ক্যাসিনো (Casino) তে ৫.৪ শতাংশ (%) লাভ হয়। কিন্তু একটি ভাল কোম্পানির শেয়ারে কত পরিমাণ লাভ হয়, দেখে নিন।
আবার, যদি আমরা লাভের পরিমাণ কমিয়ে ধরি, তাহলে আসে, লাভ = ৫৫ শতাংশ (%), ক্ষতি = ৪৫ শতাংশ (%), সর্বমোট লাভের পরিমাণ = লাভ - ক্ষতি = ১০ শতাংশ (%) !! তাহলে আমরা সহজে বলতে পারি যে, একজন প্রফেশনাল ট্রেডার (Professional Traders) ক্যাসিনো (Casino) থেকে সর্বদা ভাল।
পেশাদার ট্রেডারদের বিট/ট্রেডিং করার ধরন?
যখন ক্যাসিনো (Casino) তে একজন খেলোয়াড় বিট করে, তখন ১ টাকার বিপরীতে ১ টাকা আসে। এর মানে হল, আপনি যদি ১ টাকা বাজি ধরেন, তাহলে ১ টাকা লাভ করবেন। আবার, যদি আপনি ১ টাকা হারান, তাহলে ১ টাকা লোকসান দিবেন। কিন্তু পুঁজিবাজারে একজন প্রফেশনাল ট্রেডার (Professional Trader) কখনোই ১ টাকার জন্য ১ টাকা বেট করে না।
তারা সাধারণত ১:২ অথবা ১:৩ অনুপাতে বেট করে থাকে। সহজ করে বললে, একজন প্রফেশনাল ট্রেডার ১ টাকার বিপরীতে ২ টাকা লাভ না পাওয়া পর্যন্ত শেয়ারটি ট্রেডিং করে না। আমি আরেকটা উদাহরণ দিয়ে আপনাকে বিষয়টি সহজে বুঝিয়ে দিচ্ছি।
বেশিরভাগ মানুষের স্বভাব হলো, সহজ জিনিসকে জটিল করে ফেলা।
ধরুন, একটি কোম্পানির শেয়ার আপ-ট্রেন্ডে মুভমেন্ট (Up-Trend Movement) করছে। উপরের ছবির মাধ্যমে এটি দেখানো হয়েছে, যেমন ধরুন, একটি শেয়ার সর্বোচ্চ মূল্য ১৫ টাকা এবং সর্বনিম্ন মূল্য ১০ টাকা। ধরুন, আপনি ১১ টাকায় একটি শেয়ার ক্রয় করলেন।
যদি কোন কারণে আপনার শেয়ারের মূল্য ৯ টাকায় এসে পড়ে, তাহলে সাথে সাথে স্টপ লস ব্যবহারের মাধ্যমে সেই শেয়ারটিকে বিক্রয় করতে হবে। আর এখান থেকে আপনার দুই টাকা লোকসান হবে। যদি আমাদের টার্গেট মূল্য ১৫ টাকায় হিট করে, তাহলে আমরা এখান থেকে ৪ টাকা লাভ পাব। ফলে, আপনি ঝুঁকি নিচ্ছেন ২ টাকা কিন্তু বিনিময়ে পাচ্ছেন ৪ টাকা।
১২ মাসে ১০০ টি ট্রেড নেয়ার লাভ ৬০ শতাংশ (%) এবং ক্ষতি ৪০ শতাংশ
এখন, যদি আমরা এটি ক্রমাগতভাবে প্রয়োগ করি, তাহলে ধরুন, ১২ মাসে ১০০টি ট্রেড নেওয়ার চিন্তা করছি। এই ১২ মাসে ১০০টি ট্রেডে লাভের সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ (%) এবং ক্ষতির সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ (%)। আমাদের লাভের হিসাব হবে:
৬০ শতাংশ (%) x ২ টাকা - ৪০ শতাংশ (%) x ১ টাকা। ফলে, মোট লাভ হবে ১২০ শতাংশ (%) টাকা এবং মোট ক্ষতি হবে ৪০ শতাংশ (%) টাকা।
সর্বমোট লাভ = ১২০ শতাংশ (%) - ৪০ শতাংশ (%) = ৮০ শতাংশ (%) বা ৮০ টাকা।
এখন, যদি আমরা ধরে নিই আমাদের লাভের পরিমাণ ৫০ শতাংশ (%) হলে, আমাদের হিসাব হবে:
১২ মাসে ১০০ টি ট্রেড লাভ ৫০ শতাংশ (%) এবং ক্ষতি ৫০ শতাংশ (%)
১২ মাসে ১০০টি ট্রেডে লাভের সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ (%) এবং ক্ষতির সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ (%)। তাহলে, আমাদের লাভের হিসাব হবে:
৫০ শতাংশ (%) x ২ টাকা - ৫০ শতাংশ (%) x ১ টাকা = ১০০ শতাংশ (%) টাকা লাভ - ৫০ শতাংশ (%) টাকা ক্ষতি।
সর্বমোট লাভ = ১০০ শতাংশ (%) - ৫০ শতাংশ (%) = ৫০ শতাংশ (%) অথবা ৫০ টাকা।
শেষ কথা
আপনার পা পানিতে ডুবিয়ে কখনোই নদীর গভীরতা মাপবেন না।
পরিশেষে বলা যায় যে একজন প্রফেশনাল ট্রেডার (Professional Traders) ক্রমাগতভাবে এভাবে পুঁজিবাজারে লাভ করে থাকে। আশা করি, এই পোস্টটি সবার ভালো লাগবে এবং পুঁজিবাজার (Pujibazar) সম্পর্কে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করবে।